এ কেমন খুনসূটি
চা দেয়ার ছলে হাতটা তো দিলে পুড়িয়ে
না হয় পুড়ুক হাত বুকটাতো রয়ে গেলো অক্ষয়
বুকের ভেতরে সেই মৌচাক একঝাঁক পোষা মৌমাছি
ধূপদানী দিয়েছো মৌচাকে এবার ছুঁয়ে দিলে হাত
এই হাত তারপর তুলে নিলো তুলি
মনের মানুষটি এখন মনের ছবিটি আঁকে
ছবির সীমানা ছাড়িয়ে মাটির গন্ধ খুঁজে।
না হয় পুড়ুক হাত মনটাতো আছে
পটুয়া মনের খুঁজে এসো তালপুকুরের পাড়ে
একদিন বেখেয়ালে দেখা হয়ে যাক
সানকিতে এঁকে দেবো চম্পাবতীর পালা
পান্তাভাতের সাথে হবে রুপচান্দার সালুন
পেড়ার সন্দেশ আর মালাই দেয়া চা
সবশেষে ঠোঁট লাল
একখিলি পান।

বৃদ্ধটি আমাদের তাবু গাড়তে বললেন পঞ্চগ্রামের উন্মুক্ত প্রান্তরে। একজন মনে করিয়ে দিলেন এই সেই প্রান্তর যেখানে সমাপ্তি হয়েছিলো তিন শতকের যুদ্ধের। ওইখানে দাঁড়িয়ে বিজয়ী সেনাপতি বলেছিলেন বাড়ি ফিরে যাও আর জীবন যুদ্ধের মাঝেই কাটাও বাকীটা জীবন। বলেছিলেন পরাজয়ের ভেতরেই খুঁজে নিতে জয়ের গৌরব। সেই থেকেই আমরা তিনজন সারাটা জীবন দুয়ারে দুয়ারে প্রশ্ন করে ফিরি। বলতো কখন সেই পরাজয়ের গৌরব জয়ের চেয়েও বেশী?
প্রাজ্ঞতায় পুত্র যখন তাহার পিতাকে হারায়।
শিষ্য যখন গুরুকে হারায় জ্ঞানের পরীক্ষায়।
এ নহে পরাজয়।
গৌরবময় এ পরাজয় জেনো জয়ের চেয়েও সুখময়।
এই বলে বৃদ্ধটি থামলেন। থুতুনিতে হাত দিলেন। দাড়িটা ঘষলেন। তারপর আবারো শুরু করলেন।
জগতের সকল জয়ই শুধু জয় নয়।
সকল পরাজয়ও শুধু পরাজয় নয়।
বলোতো কোন জয় আসলে আরেক পরাজয়?
আমরা তিনজন আবারো মাথা চুলকাতে চুলকাতে তাবু থেকে বের হয়ে আসলাম। একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলো তো আরেকটা তর্কের শুরু।


মুখ দিয়ে জল পান করতে হয় না
চোখের কোটরে ঢাললেই
পেট বরাবর পৌছে যায়,
ঢোক গিলার ঝামেলা নেই ।
জল বাষ্প হয় বলে
আপাতত মাঝখানের অঙ্গটার
প্রয়োজন অনেকটা অব্যহৃত ।
পুতুলের বিয়ে ভেঙে যায়
জমাট কান্না লুকিয়ে থাকে বাতাসে
মানুষের কান্নায় ক ' গ্যালন রক্ত
জলে রূপান্তরিত হয় :
অক্ষমতার বর্ণনা আয়নার পৃষ্ঠায়
পাঁজরের বয়স বাড়িয়ে দিয়ে
আর একটা রাত ধ্বংস করে ।

ভাঙন
ভাঙা যায় নাকি শব্দশিশির
ভাঙা যায় নাকি রোদ
ভাঙা যায় নাকি বালির চড়ায়
প্রত্যয়ী দুটি ঠোঁট
ভেঙেও ভাঙেনা প্রোফাইলে থাকা
স্পর্শ্বকাতর মুখ
কি জানি কোথায় হারিয়ে ফেলেছি
একুশটা চেনা সুখ
ত্যাগী
পরিচিত বৃত্তের
বাইরে যখন আসি
মনে হয় আছি,ভালো আছি
জটিল কুটিল ভ্রুকুটি তো
চিরন্তন নয়
অজানার গহ্বর থেকে
মূর্ত হয়
নিস্পৃহ আকাঙ্খার
দূর্নিবার স্রোত
তাই জীবনের যা কিছু
না পাওয়ার দলে
তারা গৃহত্যাগীই থাক
আমিত্বের শ্রেষ্ঠ অহংকারে....

তোমাদের প্রয়োজনে পথ হেটেছি.
আকাশ শহরের বৃষ্টির মন্তাজ
অনেক চোখের কোলাজ ....বুকে সেঁটে .
প্রত্যেকের একটা নিজস্ব পাঠচক্র আছে, তোমাদের
ডিগনিটি আছে .....সাফল্যের পূর্ব নির্ধারিত সঙ্গা আছে.
এসবের বাইরে দিয়ে পথ হেটেছি তোমাদের প্রয়োজনে
অপ্রয়োজনেও. গভীর ভোর কাবুলিয়ালার মতো পিছে পিছে ফেরে,
অনেক মুখের কোলাজ দাবি করে "ঋণ শোধ হয় নাই".
সাধুজন নই, বকের মতো একাগ্র ধার্মিক নই, পাথরের মতো আত্মমগ্ন
বা বালির মতন সন্চারনশীল নই....কাঁকড়ার মতন জঙ্গম, যদিও
এলোমেলো পথ হাটি. জেব্রা ও জেব্রা ক্রসিং একাকার হয়ে যায়
অলিক শহরে.তোমাদের প্রয়োজনে পথ হাটি, অপ্রয়োজনেও.
কোনো ঋণ শোধ হবে না আর.
শুধু এটুকু প্রতক্ষ করতে পারো স্থবিরতায়,
আমার ভ্রমনশীলতা ঠিক তোমাদের বিপরীত
এটুকু আত্মপ্রসাদ দিতে তোমাদের...তোমাদেরই প্রয়োজনে
অথবা অহেতুক পথে পথে হাটি.


অশান্তি জানলাজোড়া সিল্যুয়েট, ছেঁড়াখোঁড়া সুকুন,
শীতের চাদরমাস, আয়নাপ্রবণ আজনবি,
'শেষ কাজ', 'কাজ শেষের' পার্থক্যটুকু,
অনুভব করেছি, তবে আঁকা যায়নি যে রকম ছবি
কালো গাছ, তার পাশে শব্দভারে মজে যাওয়া পুকুর
সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে আজীবন, অদ্ভুত অগভীর!
লক্ষ লক্ষ উপন্যাস বুকে চেপে মরে যাচ্ছে কবি ...

আজকাল চাঁদ, জোত্স্না
ঘৃন্য বাস্তবের পর্দায়
ঢেকে দেয় শব;
গেলাসে গেলাসে
মেকি সভ্যতার
নেকু উত্সব
ম্যাগমার মতো ঝরে...
তবু শ্মশানের চিতা ভেঙে নাভি
আঁচলের খুঁটে রাখা
প্রেম দাবি করে ||

সে সমস্তই যেন শীতকালে ভোরের শিশিরমাখা ঘাসে
খালি পায়ে হেঁটে যাওয়া সুখ। আলতো মাটির কাছে
আর যা যা রেখে আসা যায় – আমাদের মগের মুলুক
শিকড়বাকড়, ভাঙা ডাল, পাতার হলুদ গাঢ় রঙ, চিরকুট
লাল মেঝে, জানলার শিক, রাস্তা পেরিয়ে টানা ছুট
আদানপ্রদান, লেনদেন। বারোর একের বি হরিপাল লেন –
সরু সিঁড়ি, কত ভুলচুক।
সে সব এখনো যেন শীতকালে ভোরের শিশিরমাখা ঘাসে
খালি পায়ে হাঁটবার সুখ।

ছোট্ট বিট্টুর
প্রার্থনা একটাই
আরোবেশি আরোবেশি
আরোবেশি ছুটি চাই
একঘেয়ে বইগুলো
ভালোতো লাগে না আর
ছুটি পেলে ঘুড়ি হাতে
সারাদিন মজাদার ...
ও পাড়ার হরিকাকা
ছুটি শুনে ভয় পায়,
কারখানা ছুটি হলে
রুটিহীন দিন যায়...
নিধুদাদু প্রতিদিন
কাঁদে আর ছুটি চায়,
সন্তানের বোঝা হয়ে
জীবন কাটানো দায় ...

মায়া জমে জমে
ফেটে যাবার একটু বাকি তোমার মুখ
ওপাশে আমি যে অস্থির
ভেঙে দেব নাকি কাঁচ!
থাক, যদি কেটে যায় তোমার
বিন্দু বিন্দু ঘামফোটা নাক!
তোমাকে দেখে দেখে
মায়া করতে না পারার যে স্পন্দন
হৃদয়ে আমার প্রতিধ্বনিত হবে
তা দিয়ে একটা বাসা বানিয়ে দেব
তোমার জন্যে।
আপাতত আমার বুকে
তোমার একটা বাসা প্রয়োজন।

ক্ষুধা কি
ক্ষুধা কি সার্বজনীন! হয়তো অতন্দ্র কোন পাখি
গুম হয়ে যাবে রূপালী পর্দায়-
দীর্ঘ লাইন ধরে
কালোবাজারিরা টিকিট কেটে সিনেমা দেখবে
নাছরীন
সবাই পারে না। তুমি পেরেছ নাছরীন;
অবৈধ বিশ্বাসে আস্থা রেখেছ রাতদিন।
মাধবী
বয়স আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দ্যায়?
নাকি অন্তর্নিহিত আত্মমুখীতা
প্রয়োজন বুঝে নেয়
বুঝতে পারি না।
কোলাহল থেকে দূরে চলে গেলে
নদীও নিঃশব্দ হয়-
তুমি আমি অন্তর্লীন এক দুর্বোধ্য জগতে
হরিণ শিকার থেকে ফিরে
হরিণ শিকার থেকে ফিরে এসো চৌরাস্তার ভীড়ে
এখানে একাত্ম হয়েছে চার ভিন্নমতবাদী-
স্ব স্ব দিকে চলে যাওয়ার আগে তাদের শরণ নাও
আমি যে ঘরে থাকি
আমি যে ঘরে থাকি সে ঘরে সর্বদাই শীতঋতু;
হিমেল হাওয়ায় ঠোঁট ফেটে চৌচির-
তীব্রতার ভেতরে কচুপাতা মুড়ে শুয়ে থাকি
তবু শজারু এসে উদ্ধার করে না।
আলো ও ছায়ার দূরত্বে হিমচুম্বন
ম্লান হয়ে যায়।
আমাদের পৃথিবীর মতো
আমাদের পৃথিবীর মতো অদ্ভুত গোলক আর নাই
কার্যত আমরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছি নৈর্বেক্তিক
আমাদের জ্ঞাতসারে ধোঁয়ার কুন্ডলী,
ব্রুণোর চিতার ছাই ওড়ে গীর্যার পাশে।
চারিদিকে ব্যগ্র অন্ধকার
চারিদিকে ব্যগ্র অন্ধকার। কোথায় তুমি তীব্রতা?
আমি হাড়ের ভেতরে; বেদনায় বন্ধ চোখ।
শরীরইতো বড় নিয়ামক। চোখের কাছে
হার মেনেছে চিতার চিৎকার-
তুমি দেখেছ
তুমি দেখেছ অনিঃশেষ ফুটপাথ
প্রসন্ন বিস্ময়ে মিশে গ্যাছো হঠাৎ
তুমি দেখেছ বৃষ্টি ফোঁটার পতন
তুমি দেখেছ সারি সারি বেলুন
উড়ে গ্যাছে হায় গল্পের মতোন।

তোমার সঙ্গে কথা হয় মাঝেমাঝে, মনেমনে
কখন সখনো বলো - হ্যালো
কখন কখন বেজে যায়, অনেকক্ষন
বুঝি অসময়, তবু
না কেটে দিয়ে লাইনটা ধরে রাখি
কাঠবাদাম গাছটা ওমনি আছে জানলার বাইরে
বারান্দায় কাপড় মেলার নাইলনের সবুজ দড়ি
পাখীদের জন্য মাটির মালসায় জল
কোণে রাখা ফুলের টব
জানো সব আগের মতোই আছে, ঠিকঠাক
ঘরে জানলার দিকে মাথা করে রাখা বিছানা
বিশাল বালিশের স্তূপ, যেন আধশোয়া তুমি
মুখের ওপর ভূল করে এসে পড়া কয়েকটা চূল
আমার কাজে না যাবার একটা অযুহাত
অকর্মণ্য লোক বলে তোমার কপট উষ্মা
হে কঙ্কাল সুন্দরী আমার
প্রায় চারশ বছর হল
হারিয়ে গেছ তুমি
বিছানার ভাঁজে তোমার উষ্ণতা
আজ শীতল শ্মশান

উনুনের ধোঁয়া মাখা চোখ আঁচলে মুছতে মুছতে তুমি বের হয়ে গেলে।
হাঁসগুলোর খাবার দেয়া হয়নি এখনো। গরুর গামলায় দেয়া হয় নি মাড়।
হেঁসেলে ঢুকে দেখি ধনেপাতার তুমুল ঘ্রাণ। ছড়ানো ছিটানো সব।
বাটিতে ফালি করে রাখা আছে ক’টা আম। সর্ষে বাটা। কাঁচা মরিচ।
বাইরে পোড়ানো হচ্ছে বেগুন। উঠোন জুড়া গন্ধ ছড়ানো।
ওই কোনায় ভাজা হচ্ছে মুড়ি চড় চড় আওয়াজ তুলে।
ঢেকির শব্দ শুনি ধিনিক ধিনিক। ভানা হচ্ছে চিকন ধানের চিড়া।
ভেতরের ঘরে ঢুকেই গন্ধ। নূতন তোলা পাটালী গুড়ের সুবাস।
এদিকে গোয়াল ঘরের বেহাল অবস্থা। চানা গোবরে এক।
হাঁসের ঘরটাও করা হয় নি পরিষ্কার। কামলারা ব্যস্ত ধান কাটায়।
নবান্নের ধুম। মেলা আছে। পালা আছে। আসছে ওয়াজ মাফিল।
ওদিকে জামাই আসবে। মেয়েটা আসলো নাইয়র এই প্রথম বার।
তুমি কতো না ব্যস্ত হয়ে আছো আজ। তোমাকে খুঁজেই পাওয়া ভার।
এরি মাঝে আশায় আছি কখন একটু ফুরসত হবে তোমার কাছে বসিবার।

বন্ধুদের ই এই আসরে আজকেই যে শেষবার,
কালকে থেকে তোদের মাঝে রইব না রে আর...
চলে যাব আনেক দুরে,
যদি দেখিস পিছন ফিরে,
দেখতে পাবি তোদের মনে,
লুকিয়ে আছি ছোট্ট কোনে,
হয়ে একটু মিষ্টি হাসি,
মনের মাঝের একটু খুশি,
কাখনো বা আসবো হয়ে চোখের কোনের জল,
সেদিন আমায় কে চিনবি, বল রে তোরা বল....।

আমি জানি চোখভাষার মানে
একটি স্থির সময়
জীবনেই মৃত্যু থাকে
তবে অভিযাত্রায় থাক
নগ্ন সাগরবেলা
আনন্দের সমুদ্র-স্নান
তবু মেরিনারের সমুদ্রমুখীনতা
অতলান্তিক টান
একটাই কথা বলে – যাত্রা
জোয়ার-রেখায় চিহ্ন রাখা আছে
কতটুকু পারি
কতটুকু জুড়ে থাকা যায়
এই মানুষ লীলায়
প্রাঞ্জল হলে তুমি
বন্ধুস্বভাব
স্বরলিপি জুড়ে হলে
পত্রমিতার অক্ষর
আমি চিনি গোধূলি
ক্রিমসন ফয়েস লেক
দুই চোখে ধরে
কে নিয়েছে বৃক্ষবাস
মধুরা হয়েছে কে
রক্তের ফুল
পুষ্পারতি হোক
মধুপের বন্দনা
ঋণ কিছু থাক সুন্দর
প্রার্থনা থাক;
গ্রহণের অন্ধকার
অচেনা সময় থাক কিছু
আমার চেনার চিহ্ন
শময়িতার চোখে
আলো করে থাক
অন্তরপ্রান্তর,
গত সব দিনের
কবিতা
আপোষের সিঁড়ি পেরিয়ে যে গৃহ
তার কিছু শান্তি আছে
সন্ধ্যাবরণ
তার এক নাম আছে
ফুলকলি
বহু আগুন গ্রীষ্ম পেরিয়ে
আছে মরমিয়া মৌসুম,
শস্যস্নানের জল
বৃষ্টির রূপসারি ধারা
আমি জানি চোখভাষার মানে
একটি স্থির সময়
আমি জানি শব্দের মানে -
চারিদিকে অদৃশ্য হরিণের
পায়ের নূপুর

সবাই ঘুমিয়ে । আর একটা রাত
জ্বলন্ত সিগেরেটের মতো শেষ হচ্ছে
অন্ধকার ঢেউ অনুভবহীন নিস্পন্দ
মিটমিট তারকা অস্পষ্ট
সামনে ও পেছনে ডাকছে পেঁচা ;
বৃষ্টির শব্দ ছাদ আটকে দেয়
মেঘের ঘ্রাণ ঘরে ঢুকে
হয়তো তোমার ভেতরটা খাঁ খাঁ করলে
মনের ফ্রিকোয়েন্সি নেড়ি কুকুরের মতো
ধাওয়া করে কামড়াতে আসে
তখন সমুদ্রের ঝড় সহজে টের পাই
আমার শূন্যতার একমাত্র প্রতিষেধক তুমি ।

সকাল থেকেই মনটা ভাল নেই
মাঝে মাঝেই এমনি হয়
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় বসে বসে কাজ
পাঁচতারা ইমারতের জন্য অন্তরশজ্জা’র নক্সা প্রস্তুত করা
পুরু কাঁচের টেবিলে রাখা চিকণ-শুভ্র গণকযন্ত্র
যার গায়ে, এঁটো ফলের শিলমোহর, তাতে হাল্কা আভা
সাথে, সংক্ষিপ্ত বসনা চিকণ-শুভ্রা এঁটো সহকর্মীনী, তার আভা যদিও উজ্জ্বল
না চাইতেই সময়ে সময়ে এসে যায় শীতল পানীয় বা উষ্ণ স্পর্শ
আছে বোস’বাবুর কারখানায় তৈরি মধুর স্বর-প্রেক্ষণ যন্ত্র
আরও সব নানান মনরঞ্জনের উপকরণ, এদিক সেদিকে ছড়ান ছেটান
তবু, মন ভাল থাকেনা মাঝে মাঝেই
তুমি বল –
এই ‘অতৃপ্তি’ আমাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে
ওপরে উঠতে উঠতে একদিন আমি
এসব ছেড়ে নিজের ব্যাবসায় নেমে পড়ব
আমি শুনি, কিন্তু খটকা লাগে
মানুষ ব্যাবসায় সবসময়ই কেন কেবল ‘নামে’?
সেকি এমনই অধঃপতন, যেখান থেকে ওঠার প্রশ্ন অবান্তর?
যদি একান্তই নামতে হয়, আরও ওপরে ওঠা তবে কিসের আকর্ষণে?
কারনানী ম্যানসনের অনীমা খিলখিলিয়ে বলে -
আমার নাকি মনের তলায় ফুটো, তাই মন আর ভরে না
শুনি আর হাসি
মন খারাপের যন্ত্রণা প্রশমিত হয়, আদিম বোঝাপড়ার ক্ষণিক তাপে

ও কবিতা, আমার কবিতা
ফয়েজ কবির
আকাশ থেকে কি নেবো আজ
মেঘ পশলা? রংধনু সুর?
নাকি সে মন যে মন করে শুধু ঘুর ঘুর
আকাশে আজ তিমিরা খেলে কোনটা লাল, কোনটা সবুজ
কোনটা কেবল ফোঁটা ফোঁটা জল করে ছলছল
কোনটা আবার পরী চঞ্চল মেজাজী প্রবল
আকাশে আজ তিমিদের সাথে বড় বড় মাঠ
রঙিলা শাড়ীর আঁচল ধরে খেলে সেল ফোন
আঙ্গুলের ডগায় তারা হয় ফুল নিমিষে ছুটে
উল্কার মতো বেভুল নদীর গা বেয়ে বয়ে
আমি মনে হয় লাল পিঁপড়ে কৌশলী চোর
এসেছি নিতে তোমার মনের গোপন চাবিটা
তোমাকে আমার ভীষন দরকার কবিতা, ও কবিতা, আমার কবিতা!

শিস দিয়ে তোকে ডাকলে
অনেক দূরের ঈগল পাখিটা চক্কর কাটে, কাটতেই থাকে
রিং টোনে জেগে থাকলে
মাঝ রাত্তিরে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, " বললি না কাকে........."
দলছূট যত রঙবাজ মেঘ, স্কুলের পাঠ্য, ষোলোর আবেগ
জামার কলার, অলিপাব বার, মনে পড়ে যায়,
খাচ্ছে আমায়, আমি ও খাচ্ছি
একলা টেবিল......
এক কাপ চায়ে আধ খানা ঠোঁট
তোরও ভিজছে আমার ও বৃষ্টি
সন্ধ্যের মুখ ভিজে জামা গায়ে পাশাপাশি হাঁটা
কেউ কি দেখলো ?
সব রাস্তাই বড্ড বেভুল, সব রাস্তাই বাড়ি খুঁজে পায়
আমরা দুজন হারাতে চাইছি
আমরা দুজন এক সমুদ্র,
আমরা আসলে শরীরে ও মনে একটা দারুন রাস্তা খুঁজছি
এমন রাস্তা ক্রমশ যা ফিকে, পৌঁছবে কোন অনির্দিষ্টে
আসলে আমরা হাঁটতে চাইছি, এবং শুধুই হাঁটতে চাইছি...
ভাঙা দেরাজের গোপন বাক্সে
কয়েকটা কথা আগোছালো পড়ে, পড়ে থাক আর সঙ্গে নেব না
এখন নতুন ঠিকানা খুঁজছি
নতুন ঠিকানা খুঁজে পেলে ফের ফিরে এসে তোকে
নিয়ে যেতে পারি, সামান্য আড়ি আপাতত
আর, তুই কি পারবি...........?
আসলে আমরা খুঁড়তে খুঁড়তে নিজের জন্য সুখ সুড়ঙ্গ
বানিয়ে নিয়েছি অভ্যাস মত,
আঘাত জখম আবদার ক্ষত রোগ বিভিন্ন, একই পথ্য
স্থাণুবৎ্‌ নিজ গর্তে, শালগ্রাম শিলা সেজে বসে আছি
অভিন্ন দুই শর্তে ।

‘কবিতার কার্নিশে জমেছে শব্দের বারোয়ারী মেলা’
এ কেমন কথা, বাজারে বিকোবে?
শব্দচূড়ায় নীলান্ত গোলাপ শুধু
নীলেরই ছায়া - আকাশজুড়া ব্যপ্তি তার!
শব্দের কারসাজি যদি কবিতা হয়
তবে আমিও কবি কেননা –
আমিও অনেক কারসাজি জানি;
হাত সাফাই থেকে শুরু - মন সাফাই,
মাথা সাফাই আর বাজার সাফাই
বাকপটুতায় মূহুর্মূহু করতালি লুটাই জনতার উল্লাসে
কখনো বান্দর নাচাই জনতার ভীড়ে
আবার ডুগডুগীর করতালিতে মাজন বেচি মালিশ বিলাই
প্রপেলারে জোর পেলে উচ্চ ‘স্বরগ্রাম’ বাজাই
নাগেশ্বরী চটি পায়ে জনতার মাঝে আমি
নিজ-স্বার্থে পরিসেবাও বিলাই!
বচন আমার কবিতার চে’ও ক্ষুরধার
আমার উচ্চগ্রামে কাঁপে মসনদ, কাঁপে ক্ষুধিতের আত্না
আর আমজনতার রুধীতে ভিজে পিঙল পিরহান!
আমি শব্দের জাদুকর, আমি কবি, আমি মহান!!

তাকে পেলাম, জড়াশূন্য ইচ্ছা ও ছায়ায়
প্রকাশ এটুকু... সুকীর্তি অন্য কিছু নয়
দু-চারটি অনুনয়, বিনুনয়
আমাকে চিনে রাখে বনবাড়িতে হেঁটে আসা
রূপবতী নিমপাতা, মেথিশাক-ডাঁটা
এই ধরো, তালু হাতে আমাকে ক্ষুদ্রাকৃতি করো
দেখ, তিন দিনের সবুরে ফুটে ক’দিনের মেওয়া
নিজ দখলও উইড়্যা যায়, পিঞ্জিরায় কাছের আত্মায়
নিজের ভেতর অজস্র বিস্মরণ, সে-ও অধরা
বেঁচে থাকার শোক, আশাকৃতি সব সামাজিক
গত শীতে আমারও প্রস্তুতি ছিল ঘনায়মান সন্ধ্যাভাব
ঝাঁক রোদ টেনে সন্ধ্যাকে হত্যা করতে পারেনি বলে
দুঃখ পেল চোখ ও নোখ
সূর্যাস্তেুর পূর্বক্ষণে আমার বে-ভোলা স্মৃতিরা যেন
রক্তাক্ত ছায়া মোড়ানো কফিন
তাকে পেলাম রহস্য-বনে উলটানো পাতায়
জন্ম-মৃত্যু এমন নিয়মে বাঁধা, ছুঁতে মন চায়
প্রাণ খুইল্যা দিলেই বাঁচি জীবিতের আত্মায়

নিজস্ব কিছু আর সরল থাকছে না
সেদিনও পুকুরে পাঁতিহাসের ঝাঁক
ভয়হীন দাপিয়ে বেড়াত চারপাশ
প্রিয় পানকৌড়িটা আসত মাছ খেতে
শেওলা পুরোনো ভাসমান তকতায়
রোদ পুহাইত সুপরিচিত কচ্ছপ ।
মেয়েদের গন্ধে-গল্পে-হাসি-ঠিসারায়
পুকুরের ভাঙা ঘাট চঞ্চল থাকত
মগজে - ভূগোলে
কি যে হয়
কি যে হবে...
সবখানে ভোগের ইতস্তত তরঙ্গ
মূল্যবোধের যক্ষ্মায় নগরায়নের
সাদা চামড়া বুদ্ধিজট, পুঁজজীবাণু
সবকিছু ধ্বংসের মতো শেষ করছে ।

প্রকৃতি তোমাকে নাচ আর গান দুইই শিখিয়েছিল
আপন খেয়ালে গাইতে যেন শিমুলের ডালে রাঙা বলবুলি
নাচতে তেমনি --যেন পাহাড়ি ঝর্ণার উছলা জল
তোমার গানে একদিন সুর মিলিয়েছিলেন দিল্লীর এক বাদশাহ
নাচের মূদ্রায় অঙ্গ ঢেলেছিলেন বঙ্গদেশী এক যুবরাজ
তুমি নাচলে আর নাচালে সেদিন! সেই হল নাচের শুরু---
নাচতে নাচতেই বাদশা একদিন পড়লেন সিংহাসন ভেঙ্গে
দিশেহারা যুবরাজ ঘোরের ভিতরে হলেন অন্ধকূপে দেশলাই
আজো তিনি জ্বলেন প্রতিটা পূর্ণিমায় ভিজে ভিজে।

কেমন পোশাকে তুমি ঢেকে ফেলো আদিম তোমাকে--
বলাকা বীরকে চায়, বীর গেঁথে ফেলেছে সোমাকে
সোমার কিশোরীবেলা ধোঁয়াধোঁয়া, স্মৃতির কুমার
কুমারের গান বাজে বেতারে, তা কানে নিয়ে বৃষ্টি রুমার--
পোশাকে ঢাকছ, সে কি নগ্নতা? দেহের আকার?
ছিঁড়ে না ফেললে বলো--হলনা এ প্রকৃত মিলন
আসলে ভেজাই ভবি, মাথা ঢেকে কিসের শীলন?
পারলে পাতায় ঢাকো--স্বকীয় যা---আপন শাখার
বীরের ঘরনী সোমা, দেখা হওয়া রুমা ও কুমারে
বিধাতা চাননি, তবু ঘর বাড়ে আদমশুমারে
মিলন পূর্ণ হয়, চাওয়াপাওয়া বলাকার মতো
অলীক হাওয়াতে ওড়ে
বেতারে বাজতে থাকে---গায়কের গলা কার মতো?

সফেদ হয়ে আসবো
কেউ আমাকে চিনবে না
গোসল সেড়ে আসবো
কেউ আমাকে ঘাটাবে না
পানিতে ওজু করে নেব
আবারো ভাল মানুষ
তাবৎ নষ্ট বীজ ও বীজাণু,
ফসল ও ফসিলের অণু পরমাণু
সোনা রুপায় ধুয়ে নেব
এতেই ঢের পবিত্র হবো
এ ভাবে সফেদ হবো বারবার
যত বার সাধ হয়
কেউ আমাকে জানবে না
কেবল একজন ছাড়া

বার বার তুলার সংকটে
ফলহীন আমার শীর্ণগাছে
সুদৃশ্য ঝুলে ঝুলে থাকে
কোকুন সংসার
এই মথেরা যে শরীর চেনে
সেখানে কাকের শব্দে জাগে
মৃত সব গাছ
অযথা দিন ক্ষয়ে গেলে
মিথ্যে রাতের ডামাডোলে
তোমাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি
হাঁসের পৃথিবী জুড়ে
শত শত কাক
শাদা যে আকাশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
নেমে আসো বিপন্ন ঘরের চালে
তোমাকে বলতে গিয়ে তুলার স্বপ্ন-গাঁথা
কৃষক হয়ে যায় ভূমিহীন দাস
একেকটি পায়রা হত্যা করে
অভূক্ত তোমার শরীরের পাশে
ভরপেট শকুন-আহ্লাদে
ভুলে যাই শিমুল ফুলের গান
এত সুন্দর পাখি ও ঋতু দিনে
তোমার ওখানে হালকা তুলারা উড়ে
আমার এখানে গাছের ডালে ডালে
কোকুন হয়ে ওঠে কাকের সংসার

করতল ছোঁয়া লতার পাতার ছবি যে আঁকব
প্রগলভতার লোভে আর ক্ষোভে, কে যে কাকে ছোঁবে
বুঝতে পারিনি, বেলা বয়ে গেল
এমন দিনের যোগ্য রাতকে আর কি কি দেবো?
আর কি কি দিলে বিষণ্ণতার ডাকনাম ধরে তাকে ডাকা যায়?
চেনা রাস্তায় কতবার যেন এভাবে আমরা এই কোণ থেকে
অন্য কোণের সওয়ারী করেছি, কতবার যেন নিয়নরাত্রি পিছলে গিয়েছে
মাতাল মাতাল
হরতাল আজ হৃদয়ে হৃদয়ে দেওয়ালের গায়ে দাবীদাওয়া হয়ে
লাল অক্ষরে, কালো অক্ষরে ঠাসবুনোটের কথকতা আরো কত কথা
বলা হয়ে গেলে তবে আকাশের রঙ বিষাক্ত নীল, বলে দিয়ে যাও
আর কি কি দেবে এমন দিনের যোগ্য রাতকে?
মাথা রাখা যায় এতটা চওড়া মানুষের কাঁধ, ভরসা লিখেছে এমন হাতকে
কি বা দিতে পারো?
কোনদিন যাকে ধোবে না বৃষ্টি এতখানি গাঢ় ক্ষতচিহ্নের চারপাশে
আজ শ্বাসরোধ করা ধূলো উড়ে যায়, শাদা তুলো ওড়ে
আর কি কি দিলে বিষণ্ণতাকে ডাকা যায় তার ডাকনাম ধরে?

ফেরেশ্তারা আসবেন...
এখন থেকে স্মৃতি হয়ে যাবো
মার্বেল চোখে আর বাঁধবেনা বাসা চাঁদগুলো
কালো কুয়াশায় উড়ে যাবে কাক, একা মাস্তুল ছুঁয়ে
ভোরের মসজিদে কেউ দিবে আজান বাতাসটা ফুঁড়ে
যতগুল হিসেবের খাতা, হিস্যে নেয়ার ফেরেশ্তারা আসবেন
আধাঁরের আবরনে, কাটবে পাতায় পাতায় দেখবে তুমি কি বলেছো আমি কি বলেছি, তারা কি বলেছে।
আমি গল্পের ভেতর, তুমি কবিতায়, তারা হয়তো উপন্যাসে
তুমি আমার, আমি তোমার, আমরা তাদের এরকম ছায়া ছায়া
মোজাইক, অসম্পুর্ন রক্তের বুনটে এখন জট বাঁধা কঠিন ধাঁধাঁ
জটিল জীনের পান্ডুলিপি নিয়ে বোধ করি ফেরেশ্তাদেরো হবে নাভিশ্বাস
তারা হয়তো বুঝেনি মানুষের মন তাদের কাছে হবে তেমন
যেমন ছিল তোমার মনটা আমার কাছে সারাটা জীবন।

কোন কোন দিন এমন উজ্জ্বল নীলার মতো
রৌদ্রেরা আসে
আমাদের বিষন্ন চেতনার মাঝে
হাতছানি দিয়ে যায় ঝড়ের মাতন
ঘাসবনে ভেসে আসে বকুলের ঘ্রান
স্মৃতিময় জেগে উঠা রনাঙ্গনের স্মৃতি
কেশর দোলানো কিশোর বল্গা হরিন
মা আমি যুদ্ধে যাবো – মহাকাব্যের পালা।
মাঝে মাঝে চৈতী হাওয়ার মতো
সাঁই সাঁই স্মৃতিগুলো ছুটে যায় এপাশ ওপাশ
শামুকের চোখ নিয়ে চেয়ে থাকে ইচ্ছেরা সব
আঙ্গিনায় কুরে কুরে ঘুরে যায় দুখের মিছিল
স্বাধীনতা হে আমার বিদ্রোহী বিভা
মুক্ত করো হে তোমার পঙ্গু মনন
আকাশে উড়াও তোমার বন্দী পালখ
সোনার খাঁচায় পোষা বিলাসী শালিখ।

বহুদিন পরে -
আজ প্রেমিকাকে দেখেছি ... ভাঙনের রাতে
রুগ্ন, নগ্ন কালো হাত ... রাত্রির মতো !
দুপাশে ঠোঁটের জমি বিধ্বস্ত -
পরলের শুকনো ছিবড়ার মতো ।
দেখে মনে হয় - বহুদিন বৃষ্টি হয়নি এপাশে এখনো ।
বুকের সুউচ্চ পাহাড় দুটো মাঝের উপত্যকায় লীন ।
কিন্তু কীভাবে ঐ নীরস শরীর থেকে নিংড়াবো রস
এমন সুপারী ফল ... তাও পান নেই সাথে
একদিন, ঐ দুটি হাতে পানের হৃদয় দিয়ে ঢেকেছিল মুখ তার
পেকে ওঠা ধানের হলুদ আলোর মতো যুবতী রূপ;
মাথায় একটিপ কৃষ্ণচূড়ার সিঁদুর
কিছুটা ঝরেছে এসে কপালের মাঝে
সেদিনই আবহাওয়া দপ্তর ঘোষণা করলো বর্ষার তারিখ
বৃষ্টির পূর্বাভাসে সেও ছিল জেগে ...
তারপর একদিন -
এমনই বান এলো ভীষণ
নদী, নালা, প্রান্তর সব টলটল
সেখানেই তার সিঁদুরের ফুল গেল ঝরে
অশোক ফুলের মতো রঙের চিতায় ... পুড়ল হাজার শব
সেই সব শবের, একটির ... সেও দাবিদার
দাবি আজ চলে গেছে ... সেও আজ নয় কারো দার
আহা- অমন পানের মতো মুখ ... আজ ফেলা পিকের মতন !
রিক্ত, নগ্ন হাত !
ভেঙেছে নিজের হাতে লাল-সাদা শাঁখের চুড়ি
এই অবেলায় পেতেছে তার দুটি কালো হাত
আমার বুকের কাছে ... হৃদয়ের কাছে
আহা- অমন সোনার ধানক্ষেত
সবই নিয়ে গেল সর্বনাশী রাক্ষসী বান ।

যেন এক বৃদ্ধ নিজের মুখ থেকে একটি করে শব্দ বার করে
সামনের এক রংচঙে দেয়ালে ছুঁড়ে মারছেন
শব্দগুলি শানানো চাকুর মত গিয়ে গেঁথে যাচ্ছে সেই দেয়ালে
যখন শব্দ ছোঁড়া সাঙ্গ হল,
দেখি সেই রংচঙে দেয়াল আর শব্দ গুলি মিলেমিশে একটি ছবি সৃষ্টি করেছে
সেই ছবিটি কিসের সেটি স্পষ্ট নয়,
তবে যাই হোক, সেটি দেখাচ্ছে বেশ মজাদার
বারবার এই ছবিটিই এসে মন জুড়ে বসছে
না জানিয়ে পারলাম না
পুনঃ – আমাদের বংশে প্রত্যেক প্রজন্মে একটি করে পাগল জন্ম নিয়েছে
আমার প্রজন্মের পাগলটি কে তা এখনও শনাক্ত করা যায়নি

তার স্বপ্ন বলতে ডায়াস্পোরার মত
স্পাইরাল মানুষের সারি
এত লোক হাঁটছে -- কারোর মধ্যে
কোনও সিগন্যালিং নেই -- অথচ অদ্ভুত সব
প্যাটার্ন তৈরী হচ্ছে
স্বপ্নে আবহ সঙ্গীত থাকে না
কেবল নৈঃশব্দ আর ঝিঁঝিঁপোকার ডাক মিশিয়ে দেওয়া
এটাকেই "ওয়াইট নয়েস" বলে
কিন্তু তার রঙ শাদা নয়, তীব্র ধূসর
সারিবদ্ধ মানুষের থেকে সে কত দূরে আছে
তার জানা নেই, কিন্তু সেই স্পাইরাল উদ্দেশ্য করে
মন্ত্রমুগ্ধের মত ঘুমের মধ্যে এই হেঁটে যাওয়া
তীব্র আকর্ষক ।
সব ঘুম এক সময় ডায়াস্পোরার মধ্যে
ঠিকই নিয়ে যায়
হাজার হাজার মৌন মিছিলের মধ্যে
কী দুরন্ত প্যাটার্ন! আর তুমিও সিগন্যাল ছাড়াই তো বেশ ভালো!
নাহ । সিগন্যাল রয়েছে, সবাই কী যেন একটা বিড়বিড় করছে এক সাথে
ওহ! এই সেই তীব্র ধূসর
"ফেরিয়ার ফেরিয়ার ফেরিয়ার ফেরিয়ার ..."
ফিরবার কথা এরা জানে
অন্ত্যমিল-এর দ্বন্দ্বটিও ...

অল্প কথার গল্প ছলে
আধখানা ঠোঁট হেসে বসবে কাছে এসে,
মুখ লুকিয়ে গ্রীবার নীচে বলবে তুমি স্যরী!
ঠিক আছে সোনা –
মলিন হেসে আমার শান্তনা!
‘না, ঠিক নেই’ বলে –
অস্থিঃপাঁজায় মুখ লুকিয়ে
স্টেথোর মত কান চাপিয়ে
শুনবে হাঁপড় উঠে-নামে
বলবে আবার ‘আমায় করো ক্ষমা’ –
অধোবদন মলিন ব্যসন
ভাষাহীনার প্রিয় ভাষন;
কোড়ক মাঝে গুটিয়ে যাওয়া কলি!
মুক স্থবির মৌনবীনা অনড় অটল পাতা দু’টি
নীরবতার আগল তুলেই প্রকৃতিকে কইবে কথা
আপন ঠিশারায়
উদ্বাহু টান রাঙা অধর মনান্তরের ভাষা...
প্রকৃতি ঠিক বুঝে নিবে মনের সকল কথা!

সব কিছুরই শেষ আছে একদিন
যেমন তুঁতগাছ শেষ হয় আগে
তারপর বটবৃক্ষের সাথে
কাটাবে আরো কয়দিন।
যে ডোবায় পড়েছিলো গাছেদের ছায়া
পাতিহাঁস করেছিলো খেলা
শেওলা পড়ে সে ডোবার
কালো জল সবুজ হবে একদিন
কচ্ছপ পোহাবে রোদ বটের শেকড়ে
বেঁচে রবে আমাদেরও পরে
পুরাতন জীবনের সাক্ষী হয়ে।
পাতিহাঁস চলে গেলে আসে
ডুবো জলে ডুব দেয়া পানকৌড়ির দল
অথবা বিজন দুপুরে নামে অতিথী পাখীর মেলা।
এই ডোবা একদিন এঁদোডোবা হবে
শিং মাছ বাং মাছ খুঁজে ফেরা
কাদা মাখা বালকের দল
হয়তো জানবেনা কোনদিন পুরোনো ভূগোল
এইখানে ছিলো তাল ওইখানে তুঁত
হাঁসেদের আনাগোনা পাখীদের গান
সবকিছু মুছে গেছে আজ কুয়াশার সাথে
পড়ে আছে শুধু মেঠোপথটুকু আগেরই মতো।
এই পথে এখনো পাল্কী চড়ে বাড়ী চলে নূতন কনে
ঢুলীর বাদ্য বাজে জীবনের নানা উত্সবে
এই পথে এখনো কোনদিন কাঁধে চড়ে খাটে
কাফনে ঢাকা লাশ শুরু করে তার শেষ পথচলা।
এইভাবে সব শেষ হয়
তবু শেষ নয়
আসা আর যাওয়া
শুধু ফেলে যাওয়ার ছলা
চলে যায় সব তবু ফেলে যায় কিছু
জান্তে অজান্তে কিছু ভালোমন্দ কথা
আর কিছু না হলেও
বাতাসের সাথে জমা রেখে যায়
কতিপয় দীর্ঘশ্বাস কিংবা
মেঘের কাছে ছুঁড়ে দেয়া কয়েক বিন্দু জল।
কালের আয়নায়
রেখে যায় কিছু ছায়া
তুঁত গাছ তাল গাছ বট গাছের মতো।
চলে যাবে
তবে
চলে যাওয়া মানে চলে যাওয়া নয়
অজান্তে ফেলে যাওয়ার বাহানা তোমার।

সপ্তসিন্ধুপারের কোন এক অভিশপ্ত নারীর কাহিনী
আজ ইতিহাস হয়ে গেছে ।
জীর্ণ পুঁথির ছিন্নপাতায় বিদীর্ণ হয়ে আছে
তার দগ্ধকাম দীর্ঘশ্বাস –
বুকচাপা আর্তনাদের গুঞ্জরিত প্রতিধ্বনি
পাষাণ ইমারতের দেয়ালে দেয়ালে আছড়ে মরে ।
মোতি মহলের জলসাঘরে অস্থিরতায় বেজে চলে
অভাগিনীর পায়ের নূপুর –
পোড়ো মন্দিরের প্রাঙ্গণে অদৃশ্য হাতে
গেঁথে চলে সে কূল দেবতার মালা ।
চাঁদনী রাতের বাতাসে ভেসে বেড়ায়
ফুলের সুবাস আর চুড়ির রিণিরিণি শব্দ –
কালো দীঘির গভীর জলে সাঁতার কেটে চলে
সেই বরবর্ণিনীর জোনাকি শরীর ।
পরিত্যক্ত শূন্য ভিটেয় কাপড় টাঙানো দড়িতে
উড়তে থাকে তার লাল বেনারসী-
রুদ্ধশ্বাসের অলিতে গলিতে অতৃপ্ত সেই
কামিনী কায়ার গোপন আর্তি হাহাকারে ডুবে যায় -
‘আমি যে বাঁচতে চেয়েছিলাম’ !

বাগানের কোণে নিরিবিলি দাঁড়িয়ে থাকতে
ভালোবাসতো তুঁত গাছটি
ছোট্ট নীল আকাশের মতো টলমল ডোবাটার সাথেই তার
অল্প কিছু আলাপ সালাপ হতো।
দু’টি পাতিহাঁস নটীর মতো কোমড় দুলিয়ে
বক বক করতে করতে আসতো দুপুর বেলায়
এরা বেশ জ্বালাতন করতো।
কিন্তু বাগানের কোনে নিরিবিলি দাঁড়িয়েই থাকতো
সেই তুঁত গাছটি।
সবুজ তুঁতগুলো কালো হতো
কালো তুঁতগুলো ডোবায় ডুবে যেতো
কেউ খোঁজ রাখতো না
কেবল তুঁতগাছটি এসব দেখতো।
ছোট্ট নীল আকাশের মতো টলমলে ডোবাটাকে
একদিন সে আর না পেরে
বলেই বসলো-
তোমার আয়নাটা সরিয়ে নাও বন্ধু। আমার ছায়াটা মরুক।
অন্ধ হয়ে যাক আমার দুটি চোখ.....
সেই তুঁতগাছটি এখন নাকি আর নাই
কেবল দু’টি পাতিহাঁস
নটীর মতো কোমড় দুলিয়ে
বক বক করতে করতে আসে দুপুর বেলায়।

About this blog

hit counter

Sample text

ফেসবুকে আমাকে ফলো করুন

ভিজিটর কাউন্ট

Resources

মোট পোস্ট হল

জনপ্রিয় পোস্ট গুলি

আজকের তারিখ হচ্ছে

Powered by Blogger.

Ads 468x60px

Social Icons

সমস্ত পোস্ট গুলি এখানে

Featured Posts

Blog Archive