আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায় ---- এ কেমন সর্বনাশ!
যার জন্য আমার এই বসে থাকা ;
এ যে আমার নীরব প্রেম , এ আমার গোপন ভালবাসা |
তাই তো এই সর্বনাশকে জানাই আমন্ত্রণ
তুমি এসো প্রিয় , অন্ধকারে নয়, আলোয় এসে দেখা দাও
যে গভীর গোপন ভালবাসা তোমার অন্তরে লুকিয়ে আছে ,
তাকে গোপন কোরো না |
ব্যক্ত করো , ব্যক্ত করো , পূর্ণতা দাও
তোমার মনের গোপন ভালবাসা কে অভিনন্দন জানাও
মনের অতলের ভালোবাসাকে তিল তিল করে যে সঞ্চিত করে
সেই তো প্রকৃত ধনী
যন্ত্রনায় বিদ্ধ হওয়া দুটি মন যদি ভালবাসা চায়
তবে তোয়াক্কা কোরো না কারো
কারো ভ্রুকুটিতে ভয় পেও না
ধন্য হও, ধন্য হও আর ধন্য করো
ভেসে যাও এক অনাবিল ভালবাসারই স্রোতে ||

কেন তবে এমন ভোর আসে
পেঁয়াজ খোসার মতো পাতলা আবরনে ঢেকে?
বারবার আজানের পাশাপাশি ভেসে আসে কিছু কথা
কে যেন কবিতায় লিখেছিল, প্রিয়তমা তুমি ধোঁকায় পড়ো না
 আকাশে এখনো সুর্যটা ভাসেনি  লালচে আলোয় পৃথিবী শুনশান।

ঋনী করেছিলে তোমার পায়ের শব্দে
তোমার হাসির কাছেও জমেছিল কিছু ঋন
প্রিয়তমা অবশেষে তুমিও ধোঁকায় পড়েছ বিপন্ন যৌবনবোধে
বিষ্ময় শুধু ভোরেই স্পষ্ট হয়নি, টেনে নিয়ে গেছে আসন্ন গোধুলী তক
বুকের ভাঁজে জমানো ঘাম যাকে মধু বলা যায় তুমি অন্যকে দিয়েছ অবশেষে।

অনেক রাত্রি যাপনের পর বুঝেছি
আসলে শৈশবেই কাঁচা কুল চুরি করা যায়
বড় হওয়ার জ্বালা এই যে তোমাকে পরবাস দিলাম ঠিক
তুমি ধোঁকায় পড়ে আমাকে ধোঁকা দিতে চাইলে এটাই মর্মান্তিক
 শেষ দৃশ্যে নিজেকে সেই শৈশবে ফিরে পেলাম  আমাকেই ঋনী করে গেলে শেষে!

আমার বিষাদের মিছিলে
এনোনা সন্দেহের তারাবাতি |
এনোনা “আহারে” বাছাদের |
দিও তোমাদের অনুমতি
সহ নীরব হাততালি |

পারিনি হতে “আদর্শ ছেলে”...
তাতে দিও সম্মতি |
“স্বার্থপরতার রসে টই টুম্বুর
স্বামী”...সে ব্যাক্ষানে দিও
মাথা নাড়ানো সমর্থন |
“অবহেলার রাজা” সন্তান পালনে
এ মুর্ছায় দিও তোমাদের যৌথ ছাপ |

পিছনে তাকানোর বিলাসিতায়
আজ মন আমার জ্বরা জীর্ণ |
লোল চামড়ার খাঁজে যত দুঃক্ষ
তারা “আমায় দেখো” বলে আজ
বেরিয়েছে প্রতিশোধের আশায় |

নীলে নীলাকার আজ আকাশ আমার
বিষাদের নীলে | নীল কন্ঠ আমি
নিজের দোষে | কোনো অজুহাত
বা তীক্ষ্ণ করে তৈরী দোহাইকে
আজ আর সাঁটাবোনা আমার
জাব্দা খাতায় |

“ভোগী”, “অহংকারী” ইত্যাদি দোষকে
আজ এনো বরণ করে “কলঙ্ক”
ফুলের ডালায় | দর্শক “সুধী”
তোমাদের সাহায্যে এ মিছিল চলুক
হাট পেরিয়ে মহুয়া দীঘির পাড়ে |

নামিয়ো ব্যাথার পাল্কী পুরনো অশত্থের
কাছে| নীল শালে আবৃত আমার
শরীরে জ্বেলো নীল আগুন
যাক হয়ে ভস্ম ব্যর্থতার জ্বালা |

আশাবাদী আমি সূর্যোদয়ের সময়
সোনালী আলো মুখে কতো মোলায়েম
লাগে তা জানাবো
নীল সাগরে চান করার পর||

শূণ্য পেয়ালা পূর্ণ কর সাকি;
আকন্ঠ পিপাসার কারাগার ভেঙে
বিছিয়ে দাও সেথা অঞ্চলস্থিত মদিরাম্বু।
মেঘেমেঘে ঢেকে যাক বেনিয়া রোদ্দুর
কোনে কোনে বিম্বিত আভা
চূর্ণ-বিচূর্ণ করুক আত্নার সজীবতা।

চৈতি মেঘের বালিয়াড়ি উড়াও
দুঃসহ যাতনার অভ্রচূর্ণ নত হোক ভূমে
পাতার বাঁশি না ই বাজালো শিশু –
মেলা ভাঙলো শিখন্ডী ধুলোর জালে
প্রাণ নিয়ে কাড়াকড়ি, সব সাধ ভুলে
সবাই ছুটে নিরাপত্তার আড়াল খুঁজে।

যখন সময় হবে সূর্যও সূলভ হবে
থামবে ঝড় - চেতনা ও ভূমে
 ধূলো মুছে সবাই ভাবতে বসবে
কেন এমন হলো, পাতার বাঁশি
শিশুর ঠোঁট থেকে কেড়ে না নিলে
কী এমন ক্ষতি হতো কার?

শান্তনার বাতাস আশ্বাসের ফূঁ দেয়;
সময় তা শুধরে নেবে
 কেবল মা ই জানে - তা কখনো নয়

অতঃপর
পূর্বাপর বিক্ষিপ্ত জিজ্ঞাসা
ঠাঁই পাবে তে-মাথার
চা-দোকানের সরব আড্ডায়
 কিন্তু বাঁশি বাজানো পেলব ঠোঁট দুটি
কাঁপবে না আর।

আর বছরে আবারো তো উঠবে ভরে মেলা প্রাঙ্গন
ধূলায় মোড়া সরব কোলাহলে
পতার বাঁশি ঝুনঝুনি গয়না পুতুল মিঠাই ফেরী
স-ব ঠিক আগেকারই মতোন
থাকবে সবাই রত জীবনের সরস কাব্য রচনায়
 শুধু ঠোঁট দু'খানা খেলবেনা তো আর

আকাশজুড়ে মেঘের সভা, সূর্য মেঘে ঢাকা
চিন্তা ছিল, ভাবনা ছিল, মনটা বেঁধে রাখা।
রসায়নে মন বসে না,
বইয়ের পাতায় চোখ,
জানলা খোলা, ভেজা হাওয়া
জানায় অভিযোগ।
এলোমেলো মাতাল হাওয়ায় উড়ুউড়ু চুল,
সমীকরণ লিখতে গিয়ে সাজাই শুধু ভুল।
চোখ চলে যায় মাঠ পেরিয়ে মেঘবালিকার সাথে,
বই খাতা সব রইল পড়ে, বৃষ্টি আমায় ডাকে।
বড় বড় ফোঁটায় নামে কালো মেঘের ঢল
ভিজছি আমি, ভিজছে শহর, ছায়াবীথির দল।
দমকা হাওয়ায় আঁচল ওড়ে, ওড়ে আমার মন
কদম, বেলি, বকুল, হেনা মন করে উন্মন।
ক্লান্তি ছিল, ভ্রান্তি ছিল—জলে গেল ধুয়ে
মন্দমধুর বৃষ্টিমালা হূদয় গেল ছুঁয়ে।
হিমেল হাওয়া বইছে ভীষণ, শীতল করে প্রাণ
বৃষ্টিধারা সৃষ্টি করে মিষ্টিমধুর তান,
চুমুক চুমুক কফির কাপে, মধুর এ আবেশ
ভাবি জীবন মন্দ তো নয়। এই তো আছি বেশ।

আয়!-
বলে ডাক দিতেই
হায়
পিলপিল করে
উঠে আসে তারা,
আসকারা
পেয়ে
টেবিল
বেয়ে
নেমে
অক্ষরের
সে বেহায়া
মিছিল
আশ্লেষে
ছড়িয়েছে
গোটা পাড়া

সবখানে
হাসাহাসির সে কি
ধুম লেগে গেছে
তুমিই বোঝনি এসব
অপ্রতিভ ইশারা

আকাশ রাঙ্গানোর ইচ্ছা ছিল না আমার
তবুও বার বার রংধনু হয়েছি আকাশ রাঙ্গানোর ইচ্ছায় ।
পাহাড়ের সাথে আলিঙ্গন করার ইচ্ছা ছিল না আমার
তবুও বার বার ঝড়ো বাতাস হয়েছি পাহাড়ের গায়ে কাঁপন ধরাবার ইচ্ছায় ।
সমুদ্রের মাঝে বিলীন হয়ে যাবার ইচ্ছে ছিল না আমার
তবুও বার বার নদী হয়েছি বিলীন হবার ইচ্ছায় ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
এই সবই করেছি অহেতুক এক স্বার্থপর ইচ্ছায়
কারন তোমাকে জড়িয়ে ধরে ভুলতে চেয়েছি
নিঃশব্দ ক্ষণজন্মা আমার জীবনের বধির সময়গুলিকে…।।

আমি এক অন্ধপ্রেমিক,
সারারাত সারাদিন, গেয়ে যাই প্রেমিকার গান
সূর্য-চাঁদ, পাহাড়-নদী,
তরুলতা প্রজাপতি
আলেয়া বা অমানিশা
কখনো আবার বিদিশার দিশা
আরো কত কত-শত উপমার সম্ভার
খুঁজে বেড়াই, তাতেই হারাই,
তাতেই আমার বসবাস।
প্রেমিকা মোর হাসে মিটিমিটি,
তাতেই আমি খাই লুটোপুটি।
আর ওদিকে দুর্বৃত্তের
পড়ে কামাতুর দৃষ্টি,
ছক কষে ধরতে ভাঙ্গতে,
এই আমারি টুটি।
আমি বেওকুফ, ভাবি শুধু মনে মনে
কি আসে যায় তাদের এই মহারণে?
লড়ো দেখি ভাই অস্ত্রে নয় প্রেমে,
বিশ্বাস করি আমায় ওযে চেনে।
কখনো পাবে না মন তার, যদিও দেহ
এই আনন্দে নাচে মন, দেখেনা কেহ।
আমি অন্ধ প্রেমিক, দেখিনা প্রেমিকার মুখ,
তার উৎকণ্ঠাতেও বুক ভরা মোর সুখ।
হায়েনার দল আসে, অট্টহাসি হাসে
আমি নিশ্চিন্ত মনে গান বাঁধি সুভাষে।
গান শুনে তারা বলে উঠে মারহাবা,
বুকে আশা জাগে, প্রেমবানীতেই সহসা,
মানবে হার, জিতবে প্রেম, জিতবে মানবতা
ওদিক আমার প্রেমিকার চলে অচেনা নীরবতা।
বস্ত্রহরণ, সম্ভ্রমহানি, নেকড়ে দলের টানাটানি,
আমি অন্ধপ্রেমিক, দেখি না কিছুই
দিয়ে যাই শুধু প্রেমবাণী।

ক–এ কলা খ–এ খাই
এতো বেশী খেতে নাই।
গ–এ গরু ঘ–এ ঘাস
কত ঘাস খেতে চাস।
‘ঙ’ বলে, “কোলা ব্যাঙ,
 সারাদিন ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ!
ক – খ – গ – ঘ – ঙ॥


চ–এ চাচা ছ–এ ছাই
দাঁত মাজো। ছাই চাই?
জ–এ জাম ঝ–এ ঝড়
ঝড় এলো জাম পড়।
‘ঞ’–বলে, “মিঞা ভাই,
 বিয়ে খাব। চল যাই।
চ – ছ – জ – ঝ – ঞ॥


ট–এ টাকা ঠ–এ ঠাট
ঠাট মেপে গড় হাট।
ড–এ ডাব ঢ–এ ঢল
ঢল এলো বাড়ি চল।
‘ণ’–বলে “আনো শণ।
ঘর তুলি কেটে বন।”
ট – ঠ – ড – ঢ – ণ ॥


ত–এ তাল থ–এ থাল
থালে রেখে খা‌বো তাল।
দ–এ দাতা ধ–এ ধার
ধার দিয়ে টাকা হার।
‘ন’ বলে, “নানা ভাই,
 না’বো। চল বাড়ি যাই।
ত – থ – দ – ধ – ন॥


প–এ পাতা ফ–এ ফল
ফল ভরা গাছে বল।
ব–এ বালা ভ–এ ভার
ভারী বালা হাতে কার?
‘ম’ বলে, “গা রে, মা;
‘আয় আয় চাঁদ মামা’।”
প – ফ – ব – ভ – ম ॥


এই কটি অক্ষরে
শেষ হলো ছড়া বলা।
ছড়ায় ছড়ায় হলো
মা’মণির ক-খ শেখা।


বাবা বসে গুণে দিন
আদরিনী কবে তার
গা’বে গান কোলে চড়ে।
“চাদের কপালে চাদ
 টিপ দিয়ে যা॥

শম্ভুনাথ কর্মকার


একান্ত অলকানন্দা

চৈত্রের ক্ষেতে ফিরে আসে নরম নিঃশ্বাস
ছেঁড়াখোঁড়া শরীর আজ রাতের বিছানায় অলকানন্দা।

যা হবার দূরের অশ্বত্থ গাছের ছায়ায়,
অন্ধকার হয় কেঁপে কেঁপে ওঠে বাড়তি সংসার।

একটাই পৃথিবী হাত নেড়ে বলে
তোমার সংসারের ছিপ ফেলে একটি পুরুষ।

আগুন লেগেছে পাহাড়ের বাঁকে
পাথর ছড়িয়ে ভুলে যেও একলা ঘরে।

ভুলে যাই আমার আকাশ কেমন আছো
আগুনে পোড়ো নি তো আমার অলকানন্দা।

স্পর্শ নিও
কেউ কেউ ঘরকুনো, রাতের ছায়ায় সজাগ থাকে
ভীষণ ভাবে শুনতাম –
যেমন বলেছিল সবাই, স্মৃতি থেকে
হাতের মুঠোয় পুনঃসংযোগ, জলের প্রপাত
শুধু অরণ্যভূমির।
জীবনটা বিছিয়ে দেখেছো?
দুই হাতে চেয়েছো আগুনের সোহাগ।
জমা শ্যাওলায় বসেছে যে পাখি
দিনে দিনে বেড়ে ওঠে সে
তোমার নামের পাশে – নির্দেশ বসাতে বসাতে
পরশের সংকেত নিও।

সৈকত গোস্বামী


অনভ্যাসের ভোর পাঁচটায় সেট করা
মোবাইল আ্যলার্মের সুরেলা ডাকে
পাতলা ঘুমের রাতটা শেষ হল।
শেষ মূহুর্তের রিভিশন, আরও কিছু
টু-মার্ক্সের শর্ট কোয়েশ্চন গলাধঃকরণ।
কোনোটাই ছাড়া চলবে না
হয়তো ওটাই আসবে।
পাস কোর্সকে দিয়ে আসা
সারা বছরের অবহেলা-সমূহের
সম্মিলিত চোখরাঙানি
ভুলিয়ে দেয় সময়ের টিক্ টিক্ পদক্ষেপ।
কুড়ি মিনিট পিছিয়ে যায় স্নানের সময়,
‘খিদে বেশি নেই’-এর অজুহাত
থালা থেকে কমিয়ে দেয় দু’টো রুটি,
মিস্ হয়ে যায় ন’টা পনেরোর এইট-বি।
* * * * *
কালো বোর্ডের বুক চিরে দিয়েছে সাদা চক
রুম নম্বরঃ- ২২১
আবার সেই আগের দিনের রুমটাই, মানেই
আবার সেই ফার্স্ট বেঞ্চে।
কোয়েশ্চনপেপার এলো হাতে।
লটারির রেজাল্ট দেখার মত
হামলে পড়লাম।
কয়েকপাতা উল্টেই
হাত মুঠো করে কনুই ঝাঁকাই নীচে,
‘পুরো স্যারের সাজেশানটা!’
এর পরের তিনটে ঘন্টা
প্রায় সাত আট মিনিট ফাস্ট চলতে থাকা
রিস্টওয়াচের কাঁটায় ভর দিয়ে
সময় নিঃশব্দে যুদ্ধ চালিয়ে গেল
স্মৃতিশক্তির সাথে।
* * * * *
ওয়ার্নিং বেলের পাঁচ মিনিট পরের শব্দটা
যদিও বহু বছরের পরিচিত,
তবু আজ তা যেন বাজল
অন্য কোনো এক সুরে।
আজ ছিল ফিজিক্স সেকেন্ড পেপার, আজকে বাজল –
পরীক্ষা শেষের ঘন্টা।


রামপ্রসাদ কর


এক আকাশ অন্ধকার মাথায়
নিয়ে বসে আছে একটা কালো বিড়াল
চারিদিকে গা ছমছমে নীরবতা
আর হাড় হিম করা অন্ধকার।
সেই কবে থেকে বসে আছে
বিড়ালটা, সমস্ত আলো নিভে
কেমন করে কালো কার্বনের
মতো অন্ধকার নামল
অফিস পাড়ায় – সব দেখছে সে।
বাতাসে ভারী পর্দা দুলে ওঠে
সিঁড়িতে কাদের আনাগোনা!
কাঁটা-চামচ আর কাপ-প্লেটের
ঝনঝন শব্দ,
করিডোরে পাতাবাহার গাছেরা
লজ্জায় শুকিয়ে কাঠ,
– কোনো উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের
পদস্খলন হল বুঝি।
দমকা হাওয়ায় ঘরের আলো
এক এক করে নিভছে,
খোলা ফাইলের পাতাগুলো
সামনে-পিছনে, ডাইনে-বাঁয়ে
উড়ছে, কে যেন
‘সৎভাবনা’ ‘স্বচ্ছতা’ ইত্যাদি শব্দ
লেখা কাগজগুলো বাস্কেটে
ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।
একেবারে কোণের ঘরের
দেওয়ালের ঈশাণ কোণে খালি গায়ে,
খালি পায়ে, হাতে লাঠি, গোল চশমা পরা
এক বৃদ্ধকে নড়েচড়ে
উঠতে দেখে বিড়ালটা
ভাবল এবার বোধহয়
তার চলে যাওয়ার
সময় এসেছে।

ময়ূরী ভট্টাচার্য্য


অপারমিতা
চিলেকোঠার চড়াইটা তার সপসপে ভিজে ডানাতেও উষ্ণতা খোঁজে
যদিবা অন্ধকার ঘরে ঘুলঘুলির আলোতেই ভোর হয়
অপারমিতারা দূরে টুপটুপ জোনাকির সবুজ আলো হয়ে জ্বলে
জোনাকিদের ভালোবেসে পাগল সাঁতারু
হেমন্তের শীতভাঙা নদীতে ডুব দেয়
হয়ত, রাত থাকতে থাকতেই কারো মনে
কোথাও প্রেরণা জ্বলে উঠবে।

এক চিলতে
এতটুকুও ফাঁক রাখিনি
মধুকোড়ের তো পাত্র আছে
নিঃস্বের দুটো হাতই শুধু সম্বল
তোমার সামনে যদি উজাড় করি
আমায় করুণা কোরো না
রাশি রাশি চাই নি তো
যদি পারো দু-এক পশলা হেলায় দিও ফেলে
সুবর্ণরেখার জল ছেঁকে ছেঁকে স্বর্ণকণা জমায় যারা
তার চেয়েও যত্নে রাখতে পারি
তোমার মুখের এক কণা হাসি।

বিমুখ
তোমার অহেতুক নিষেধ আমি মানছি না শঙ্করপ্রসাদ
প্রচণ্ড খরার দিনেও আমি নদী সাঁতরেছি
তোমার নিষ্ঠুর অবহেলা আমায় ব্যথা দেয় না–
যত বেশি এড়িয়ে চল তুমি
জানি, নিজের অজান্তেই তত গ্রহণ কর আমায়।
নির্বাক সাক্ষাতেও ছুটি নেই তোমার;
তুমি জানো না, কে যেন অনর্গল
কথা বলেই চলে, নিভৃতে – তোমার সাথে।
সে তুমি যতই বিমুখ থাকো না কেন!

মায়া
তোমাকে কখনই কোমল মনে হয় নি।
বারবার খুঁজেছি – ধরা দাও নি।
আমার বিনিদ্র রাতে ছায়া হয়ে আসো নি কখনও।
আমার তপ্ত কপালে কখনও ক্ষমার হাত রাখো নি।
কিন্তু কী অদ্ভুত দেখো আজ অনেক দূর থেকে তোমাকে অন্যরূপে দেখছি।
তোমার কোমল গন্ধের শরীর মায়ার আঁচলে ঢেকে দিচ্ছে সব কিছু।
আমি হারিয়ে যাচ্ছি।

কৃষ্ণকুমার গুপ্ত


আমাদের আয়ু খুব সীমিত
পরিমিত সময়ের শেষ প্রান্তে উপস্থিত
আমরা দু’জন,
এখন শেষ হয়ে যাবে ফুলের ঘ্রাণ,
কচুপাতার চরম সবুজতায় উপস্থিত
এক ফোঁটা টলটলে অশ্রু।
সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে আজ
ভীষণ মলিন আগামীকাল
আর দেখা হবে না কখনো,
আগামী কখনো আজকালকার মতো
জড়িয়ে থাকবে না হৃদয় জুড়ে,
সেখানে হয়ত অন্য নারী
অন্য স্বপ্ন, অন্য সকাল দুপুর।
সময় রঙ মাখে গায়ে
প্রতিনিয়ত চক্রাকার এই আবর্তনে
আমরা বারবার আসি
হাসি কান্নায় বেঁচে থাকি আর
অনায়াসে বলে দেই, বিদায়।

জ্যোতিষ্ক দত্ত


লেখার ইচ্ছে কেন হয়, সে নিয়ে আর ভাবিনা আজকাল, ভয় করে ওরা জেনে যাবে, তাও লিখি – লেখা শুরু করার আগে, মাঝে মাঝে নিজেকে বড়ো নগ্ন মনে হয় আমার সমস্ত ভ্রূণ কবিতার কাছে, এক একদিন তাদের ভয়ে আমি আলোর বৃত্তের দিকে পালিয়ে যাই, আর এক একদিন আমাকে লাত্থি মেরে পাঠানো হয় আমার মৃতবৎসা শব্দের কাছে…

এক একদিন বাইরের আলোটা ওরা নেভায় না,
শব্দ গুলোও খুব আঠালো লাগে, জানলার কাঁচে কয়েকটা দাগের মতন
ক্লান্তি লেগে থাকে বিছানার ভাঁজে…
আমি উঠে বসি, নিজেকে কুড়িয়ে নিতে বেরিয়ে আসি
ডালপালা সামনে যা পাই জড়িয়ে,
আর আমার সাথে ঠিক তখনই দেখা হয়ে যায় একটা আশ্চর্য লাইনের
তাকে কুশল জিজ্ঞেস করি,
একটা চেয়ার টেনে দিই… এক গ্লাস জল, হাতপাখা,
আজকের পত্রিকাটা আড়চোখে খুঁজতে খুঁজতে বলি,
‘উনি তো বাড়ি নেই, এই এক্ষুনি বেরোলেন…
একটু বসুন’…
একটা খুব চেনা স্বর তখন আমায় খোঁজে ভেতর ঘর থেকে,
আমাকে বকে,
নাম ঠিকানা জানতে চায় ওদের,
আমি জিজ্ঞেস করবো ভাবি – সাহস করে একপা এগিয়ে দেখি,
সামনে সেই নরম বিছানা…
আর তার ভাঁজ ভাঁজ থেকে জোর করে মুছে দেওয়া আমার ক্লান্তি আর
কয়েকটা অন্ধকার…

দীপা পান

 

প্রস্তুতিঃ
আমি গর্ভিণী মেঘেদের দিকে চেয়ে চেয়ে
ক্লান্ত কামনায়।
বহু দূরের প্রিয় কোনো জায়গা থেকে ধীরপায়ে
ফিরে আসার পর ঘামের রেণুর মত ম্রিয়মাণ
গোপন গ্রন্থির দ্বারে…

আজকে আমার চোখ টেনেছে শুকনো একটা নদী
কার ক’ ছটাক রোদ পড়েছে ভাগে
কার ক’ মুঠো বালির মত শোক –
হিসেব কষে না-জন্মানো টান
আর আমি ওই নদীর সাথে মিশে
স্রোতের জন্য খুঁজতে থাকি আলো
বৃষ্টিভারে শরীর ভাঙার স্বপ্নে লিখতে থাকি
বিষাদমোচন সংলাপ…

এবং তারপরঃ
তারপর ডুব দিয়ে জেনেছি জল কতটা গভীর
কিংবা ঢেউয়ের বিস্তার কতদূর
আবার সাঁতরে ফিরে এসেছি ঘাটে
প্লবতা চর্চার উৎসাহে।
প্ল্যাঙ্কটনের উদ্দীপনার অবশেষরূপে
তুমি…
আসলে ফেরিঘাট;

জলের গভীরতা মেপে সংরক্ষণ করেছি তথ্য
অসংখ্য রাত ফুরিয়ে গিয়েছে শুধু,
অন্বেষণর উত্তাপ আল্পনা এঁকে দিচ্ছে
মাছের ঠোঁটের বুদ্‌বুদ্‌।

উৎসবঃ
আর যখন গিরিখাতের ঠিকানা পেলাম
জলের শব্দের উপমা মাখে নি
পোষাক খোলার গুঞ্জন,
ক্লান্ত রঙ্গন তখন বেশ চনমনে
একটু একটু মনে পড়ছে গতজন্মের রঙ,
ব্রাশ ও বালতির ঠিকানা

তারপর ক্লান্তিতে হাতপাখা—
খসে যায়
কোথায় তলিয়ে যায়
জানিনা!
সেখানে
জলের মধ্যে জলের সেতু সুঠাম – উচ্চকিত পেশী
সেখানে
আকাশের প্রতিবিম্ব উদ্‌যাপন করে ডুবসাঁতার…

বন্দনা মিত্র

 

মা, সেই যে মেয়েটি পাখি হতে পারত, তার গল্প বল না।
– শোন তবে, এক যে ছিল মেয়ে, তার ছিল দুই ডানা।
কখন কিভাবে যেন পাখি হওয়ার বর পেয়েছিল সে,
যখন খুশি উড়তে পারত না দেখা ডানায় ভর করে
কেউ জানতে পারত না।

ডানাদুটো কেউ দেখতে পেত না বুঝি? লুকোনো থাকত?
– তাছাড়া কি ? সেটাই তো বর পাওয়ার মজা।
ভোর বেলা যখন ময়ূরকন্ঠী রঙের আকাশে লাল সুতোর আঁকিবুঁকি
সে ঘুম থেকে উঠে দাঁড়াত ছাদের আলসে ধরে
উড়ান দিত সবার অলক্ষ্যে
উড়ত যতক্ষণ না কেউ ডাক দেয়
- হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস যে বড়, কাজকর্ম নেই?
পাখি নেমে আসত ভুঁয়ে।
সারাদিন রান্নাঘরে ধোঁয়ার আলপনায় ঘামতে ঘামতে
অফিসের ছোট্ট ঘরের দমবন্ধ দেওয়ালে
ভাঙা চুনবালির কারুকাজ দেখতে দেখতে
ভীড় বাসের অসহ্য গরমে এক অচেনা চেনা মুখ খুঁজতে খুঁজতে
সে অদৃশ্য ডানা মেলে ঘুরে বেড়াত।

তার খুব দুঃখ ছিল বুঝি মা?
– দুঃখ কোথায় – তার তো ভীষণ সুখ।
আকাশে উড়লে মানুষ ছোট্ট পুতুলের মত লাগে।
নীচের কর্কশ চিৎকার ফিসফিস কানাকানি
কিচ্ছু শুনতে পাওয়া যায় না।
পাখির মনেই পড়ে না মাটিতে তার বাসার কথা।

তারপর কি হল মা?
– তারপর… তারপর একদিন সবাই মিলে তাকে খুব বকলো
কেন সে থেকে থেকেই খাঁচার দরজা খুলে আকাশে উড়ে যায়?
এটাতো নিয়ম নয়।
একটা বিরাট কাঁচি নিয়ে তার ডানাদুটো কেটে দিল ওরা।
সে মেয়ে আর পাখি হতে পারত না।

তারপর – মা তারপর?
– ডানাদুটো তুলে খুব যত্ন করে রেখে দিল সে।
মাঝে মাঝে রোদে দিত, যাতে মরচে না ধরে।
তারপর তার ছোট্ট মেয়ে একদিন যখন তার আঁচল ধরে বসলো গল্প শুনতে,
আস্তে আস্তে ডানাদুটো বার করে তার পিঠে জুড়ে দিল।

মেয়েটাও কি পাখি হয়ে গেল মা?
– সে কথা তো তুমি বলবে মা!

অর্ণব চক্রবর্তী

 

সূর্য এখন খর –
ক্ষয়া ছায়া পায়ের নীচে
বাতাসে পচা লাশের গন্ধ
দুপায়ে মাড়িয়ে যাওয়া
দিনে বহুবার আত্মকে।

রুক্ষতার স্তবে চরাচর মগ্ন
হঠাৎ এফ এমে ভাসা রবীন্দ্রনাথ…
শুদ্ধতার ভৈরবী ছুঁয়ে যাক
পোড়া সব হৃদয়কে।

About this blog

hit counter

Sample text

ফেসবুকে আমাকে ফলো করুন

ভিজিটর কাউন্ট

Resources

মোট পোস্ট হল

জনপ্রিয় পোস্ট গুলি

আজকের তারিখ হচ্ছে

Powered by Blogger.

Ads 468x60px

Social Icons

সমস্ত পোস্ট গুলি এখানে

Featured Posts